Friday, 9 May 2025

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫

সরকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর সংশোধন করার লক্ষ্যে বিগত ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিঃ তারিখে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারী করেছে। এই সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টসমূহ নিম্নরুপঃ
১) টেকসই ক্রয় (Sustainable Procurement): এই আইনের প্রস্তাবনায় “টেকসই ক্রয়” যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় টেকসই ক্রয় সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। উদাহরনস্বারুপ, আইনের ধারা ২(৯ক) এ ‘ক্রয় কৌশল’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেখানে টেকসইতা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে;  ২(৯খ) এ ‘টেকসই সরকারি ক্রয়’ এর সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, আইনের ধারা ১৬ প্রতিস্থাপন করে ‘টেকসই ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়’ যুক্ত করা হয়েছে।
২) সম্পত্তি নিষ্পত্তি: ধারা ২(১৪ক) এ ‘নিষ্পত্তি’ শিরোনামে একটি নতুন সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে। তবে এই সংজ্ঞাটি কোথাও ব্যবহার হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। এই সংজ্ঞা থেকে মনে হচ্ছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালায় সরকারি সম্পত্তি বিক্রির বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে এই সংজ্ঞাটি শুধু ‘নিষ্পত্তি’ এর পরিবর্তে ‘সম্পত্তি নিষ্পত্তি’ হিসাবে অভিহিত করলে ভালো হতো, কারন ‘নিষ্পত্তি’ শব্দটি অন্য অর্থে বিভিন্ন বিধিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
৩) ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট: নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী কার্য ও সেবা ক্রয়ের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট করা যাবে যা পূর্বে শুধু পণ্যের জন্য ছিল।
৪) “ব্যক্তি”:  ব্যক্তি এর সংজ্ঞায় “বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)” অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তবে এই সংজ্ঞায় “অথবা অনুরুপ কোনো প্রতিষ্ঠান” যোগ করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হতো। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নতুন কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান আবির্ভাব হলেও এই সংজ্ঞা পরিবর্তন প্রয়োজন হতো না।
৫) ভৌত সেবা: ভৌত সেবাকে নতুন প্রকিউরমেন্ট ধরন হিসাবে বিবেচনা করে এই ধরনের ঠিকাদারকে “সেবা প্রদানকারী” হিসাবে ধারা ২(৩৮) – এ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
৬) দূতাবাসের জন্য বিশেষ বিধান: বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস প্রয়োজনে ঐ দেশের আইন কিংবা আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুসরণ করে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে মর্মে আইনের ধারা ২ এ নতুন একটি উপ-ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
৭) আদর্শ দলিল: ধারা ১২ এ একটি উপ-ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এই উপ-ধারা অনুযায়ী বিপিপিএ কোনো বিশেষ ক্রয় কার্যের জন্য আদর্শ দলিল প্রকাশ না করলে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত দলিল ব্যবহার করা যাবে।
৮) সীমিত দরপত্র: ধারা ১৯(১ক) বিলুপ্ত করা হয়েছে যেখানে উল্লেখ ছিল যে, সীমিত দরপত্রের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলেন ৫% এর কম বা বেশী দর উদ্ধৃত করা হলে দরপত্র বাতিল হবে। উক্ত ধারার পরিবর্তে ধারা ৩২(ক)(ই) –এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত শতকরা হারের কম বা বেশী দর উদ্ধৃত করা হলে দরপত্র বাতিল হবে।
৯) কোটেশন: ধারা ৩২(১)(ঘ) অনুযায়ী পণ্য বা ভৌত সেবা ক্রয়ের জন্য কোটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেত, যদিও সিপিটিইউ কোটেশনের মাধ্যমে কার্য ক্রয়ের জন্য PW1 আদর্শ দলিল অনেক আগেই প্রকাশ করেছে এবং স্বল্প মূল্যের কার্য ক্রয়ের জন্য কোটেশন পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত। এখন এই ধারা সংশোধন করে কোটেশন পদ্ধতিতে কার্য ক্রয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
১০) বিপরীত নিলাম (Reverse auction): ধারা ৩২(১) এ নতুন একটি দফা সংযোজন করে বিপরীত নিলামের মাধ্যমে ক্রয় কার্য সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১১) যৌথ উদ্যোগের অংশীদার: ধারা ৩৯(২) সংশোধন করে সরকারের নিজস্ব অর্থে তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে, কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করতে চাইলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগ (Joint venture) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
১২) নিগোসিয়েশন: ধারা ৪৯(১) সংশোধন করে ভৌত সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয়তব্য সেবার কারিগরি, আর্থিক, কর্ম সম্পাদন পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে নিগোসিয়েশন করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, এখানে আর্থিক বিষয়ে নিগোসিয়েশন করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
১৩) ই-জিপি: ধারা ৬৫(১) সংশোধন করে সকল দরপত্র ই-জিপি পোর্টালের মাধ্যমে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে বিপিপিএ –এর অনুমোদনক্রমে অফ-লাইন দরপত্র আহ্বান করা যাবে।
১৪) ১০% কম/বেশি বাতিলঃ পূর্ববর্তী ধারা ৩১(৩) অনুযায়ী কার্য ক্রয়ের উন্মুক্ত দরপত্রের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলনের চেয়ে ১০% কম বা বেশি উদ্ধৃত মূল্যের দরপত্র বাতিল বলে গণ্য হতো। ধারা ৩১ সম্পূর্ন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং ৩১(৩) এর বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে এখন দাপ্তরিক প্রাক্কলনের চেয়ে ১০% কম বা বেশি উদ্ধৃত মূল্যের দরপত্র গ্রহনযোগ্য হবে।
উল্লেখ্য যে, এই সংশোধনী এখনই কার্যকর হচ্ছে না। সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে এই সংশোধনীসমূহ সেই তারিখ হতে কার্যকর হবে। এটা সহজেই অনুমেয় যে, এই সংশোধনীসমূহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে এবং তখন উভয় সংশোধনী একসাথে কার্যকর করা হবে।

1 comment:

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫

সরকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর সংশোধন করার লক্ষ্যে বিগত ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিঃ তারিখে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারী কর...

See the most popular posts on public procurement of Bangladesh: